Thursday, July 25, 2019

CLASS IX GEOGRAPHY PROJECT সুয়েজ খাল


Class IX
History
Project Work
Suez Canal 
                         
ভুমিকা (Introduction) :
সুয়েজ খাল  মিশরের সিনাই উপদ্বীপের পশ্চিমে অবস্থিত একটি কৃত্তিম সামুদ্রিক খাল। এটি ভূমধ্যসাগরকে লোহিত সাগরের সাথে যুক্ত করেছে। দশ বছর ধরে খননের পর পথটি ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়। উত্তরে ইউরোপ থেকে দক্ষিণে এশিয়া, উভয়প্রান্তে পণ্যপরিবহনে সুয়েজ খাল একটি জলপথ হিসাবে ব্যবহৃত হয়, এতে করে সম্পূর্ণ আফ্রিকা মহাদেশ ঘুরে আসতে ফার্দিনান্দ দে লেসেপ্স নামক একজন ফরাসি প্রকৌশলী এই খাল খননের উদ্যোক্তা।
অবস্থান (Location) :
ভূমধ্যসাগর  লোহিত সাগরের মধ্যে সংযোগকারী একটি কৃত্রিম খাল।মূলত মিশরের  সিনাই উপদ্বীপের পশ্চিমে অবস্থিত। এই প্রণালী দ্বারা আফ্রিকার মূল ভূখণ্ড থেকে পৃথক মিশর হয়ে গেছে। এর ভৌগোলিক অবস্থান ৩০°৪২'১৮'' উত্তর ৩২°২০'৩৯'' পূর্ব।
বিস্তার (Extension) :
খাল খননের শুরুতে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১৬৪ কিলোমিটার এবং গভীরতা ছিল ৮ মিটার। তবে বেশ কিছু সংস্কার ও সম্প্রসারণের পর ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে এর দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ১৯০.৩ কিলোমিটার, আর গভীরতা ২৪ মিটার এবং সর্বনিম্ন সরু স্থানে এর প্রস্থ ২০৫ মিটার। এর ভিতরে উত্তর প্রবেশ চ্যানেল এর দৈর্ঘ্য ২২ কিলোমিটার (১৪ মাইল), মূল খালে দৈর্ঘ্য ১৬২.২৫ কিলোমিটার (১০০.৮২ মাইল) এবং দক্ষিণ প্রবেশ চ্যানেল এর দৈর্ঘ্য ৯ কিলোমিটার (৫.৬ মাইল)।
উদ্দেশ্য (Objective) :

মূলত বাণিজ্যিক সুবিধার জন্য এই খাল খনন করা হয়েছে। এই খাল খননের আগে সাগর পথে জাহাজে ইউরোপ থেকে দক্ষিণ এশিয়া আসতে হলে আফ্রিকা মহাদেশ ঘুরে আসতে হতো। এর ফলে মাল পরিবহনে বহু সময় ব্যয় হতো। সেই সাথে পরিবহন খরচও বেড়ে যেতো অনেক।

সুয়েজ খালের ইতিহাস (History of Suez Canal) :

অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে জলপথে সংযোগ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুততর করার বিষয়টি আলোচনায় আসে। এরপর ইজিপ্ট অভিযানে আসেন নেপলিয়ন বোনাপার্ট। তিনি প্রথম ভূমধ্যসাগরের সঙ্গে লোহিত সাগরের সংযোগ করার বাণিজ্যিক গুরুত্ব বুঝতে পারেন। ইজিপ্ট অভিযানে নেপলিয়নের সহযাত্রী ইঞ্জিনিয়ার লেপিরে এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন। সে সময় নেপলিয়ন একটি প্রজেক্ট চালু করেন। কিন্তু প্রথম জরিপের পর তার এ প্রজেক্ট বাদ দেয়া হয়। জরিপে দেখা যায়, ভূমধ্যসাগরের চেয়ে লোহিত সাগর ১০ মিটার উচু। ফলে এদের মধ্যে সংযোগকারী খাল করতে অনেক খরচ হবে। পাশাপাশি এটি বেশ কষ্টসাধ্য হবে। তবে সে সময় ফরাশি বুর্জোয়া গ্রুপ এ প্রকল্পের পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠনের চেষ্টা করেন। ১৮৫৪ সালে ইজিপ্টে সাইদ পাশা ক্ষমতাসীন হলে সংযোগ খালের ব্যাপারে নতুন করে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সুয়েজ খাল প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন ফর্দেন্যা দ্য লেমে। সুয়েজ খালের নকশা বিভিন্ন দেশের প্রকৌশলীরা মিলে তৈরি করেন। এ কাজে ইজিপ্ট সরকারের পক্ষে কাজ করেছেন দুজন ফরাশি প্রকৌশলী। 
সুয়েজ খাল খনন করতে ১৮৫৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর সুয়েজ খাল কম্পানি গঠন করা হয়। সে সময় এ কম্পানির মোট মূলধন ছিল ২০ কোটি ফ্রা। বেশ কিছু শর্ত নিয়ে কাজ শুরু করে এ কম্পানি। খাল খননের প্রয়োজনীয় শ্রমশক্তির পাচ ভাগের চার ভাগই ইজিপ্ট সরকারকে সরবরাহ করতে হয়। খালের উভয় তীরে দুই কিলোমিটার জমি কম্পানির কাছে হস্তান্তর করতে হয়। এছাড়া জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সুয়েজ খালকে সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয় এবং চুক্তির মেয়াদ ৯৯ বছর নির্ধারণ করা হয়। ১৮৫৯ সালের ২৫ এপ্রিল ভূমধ্যসাগর এবং মানজাল হ্রদের মধ্যবর্তী এলাকায় খনন কাজ শুরু করা হয়। জানা যায়, ৩০ হাজারের বেশি লোক দিয়ে খাল খননের কাজ করানো হয়। সাইদ পাশা মারা যাওয়ার পর ইজিপ্টের দায়িত্ব পালন করেন ইসমাইল। তিনি কোম্পানির কঠিন শর্ত পছন্দ করতেন না।
২০ হাজার শ্রমিকের পরিবর্তে তিনি মাত্র ছয় হাজার শ্রমিক সরবরাহের কথা বলেন। এটি নিয়ে ইসমাইল এবং কোম্পানির মধ্যে দ্বন্দের সৃষ্টি হয়। এ কারণে সুয়েজ খাল খননের কাজে অচলাবস্থা দেখা দেয়। ইসমাইল সম্রাট তৃতীয় নেপলিয়নকে উভয় পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতার দায়িত্ব দেন। অবশেষে ইসমাইলের ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে এ বিরোধের মীমাংসা হয়। বিবাদ মীমাংসার পর খাল খননের কাজ দ্রুত চলতে থাকে১৮৬৮ সালের মধ্যে খাল খননের কাজ সম্পন্ন হয়। ১৮৬৯ সালের ১৭ নভেম্বর সুয়েজ খালকে ট্রাফিকের জন্য খুলে দেয়া হয়। তবে ১৮৬৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর সুয়েজ খাল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।
সুয়েজ খালের বৈশিষ্ট্য ( Featurs of Suez Canal) :
এটি একটি এক লেন বিশিষ্ট খাল যাতে দুটি বাই-পাসের স্থান আছে, এগুলো হল বাল্লাহ বাইপাস এবং গ্রেট বিটার লেক। সুয়েজ খালে কোন লক বা ভিন্ন উচ্চতার নৌপথে জলযান নেবার জন্য ব্যবহৃত বিশেষ গেট নেই। তাই সমুদ্রের পানি অবাধে এই খালের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সাধারণত, বিটার লেকের উত্তরদিকের খালে শীত কালে উত্তরমুখী স্রোত প্রবাহিত হয় এবং গ্রীষ্মে দক্ষিণমুখী স্রোত প্রবাহিত হয়। অন্যদিকে লেকের দক্ষিণ দিকের খালে স্রোত সুয়েজের জোয়ার-ভাটার সাথে পরিবর্তিত হয়।

মালিকানা (Ownership) :
মিশরেরশাসক সৈয়দ পাশা ১৯ মিশর  বছরের মেয়াদে ফরাসি প্রযুবিদ ফার্দিনান্দ দ্য লেসেকে সুয়েজ খালের ইজারা দেন। (১৮৬৯ খ্রি.)। পরবর্তী সময়ে এই ইজারা স্বত্বলাভকরে ইউনিভার্সাল সুয়েজ খালের  মেরিটাইম সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি। এই কোম্পানিটি ছিল এক মিশরীয় প্রতিষ্ঠান। এতে ফরাসি ও ব্রিটিশদেরও অংশীদারি ছিল। সুয়েজ খালের মালিকানা ও পরিচালনা মিসরের সুয়েজ ক্যানেল অথরিটির ওপর ন্যাস্ত। ‌আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী, সুয়েজ খাল শান্তিকালীন সময় অথবা যুদ্ধকালীন সময় - সব সময়েই যে কোন দেশের পতাকাবাহী বাণিজ্যিক বা যুদ্ধ জাহাজের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।  সুয়েজ খালের নিরাপত্তার জন্য ব্রিটেনের পক্ষ থেকে সেনা মোতায়েন করা হয় (১৮৮১ খ্রি.)। অটোমান  সুলতান (মিশরের সরকারি শাসক) ৯টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে ১৮৮৮ খ্রি.  কনস্ট্যান্টিনোপলে এক সম্মেলনের আয়োজন করেন। এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সমস্ত দেশের জাহাজ চলাচলের জন্য সুয়েজ খালকে উন্মুক্ত রাখা হবে। এরপর মিশরের প্রেসিডেন্ট ‘জামাল আব্দেল নাসের’ ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে সুয়েজ খালকে জাতীয়করণ করেন। এর ফলেই সুয়েজ খালকে নিয়ে সঙ্কটের সৃষ্টি হয়।

সুয়েজ খালের গুরুত্ব (Importance of Suez Canal) :

এই খাল তৈরির আগে কোনো জাহাজকে ইউরোপ থেকে দক্ষিণ এশিয়া আসতে হলে আফ্রিকা মহাদেশ ঘুরে আসতে হতো । যার ফলে পৃথিবীর বড় বড় জাহাজ কোম্পানিগুলোকে জ্বালানি তেল বাবদ গুনতে হতো মোটা অঙ্কের টাকা।তাছারাও নৌপথে পণ্য বহনকারী জাহাজ গুলও ভারত মহাদেশ থেকে ইউরোপে যেতে সময় নিত প্রায় ৪০-৫০ দিন ।এ খালের কারণে ইউরোপ ও ভারতের মাঝে সমুদ্রপথের দূরত্ব প্রায় ৭ হাজার কিলোমিটার কমে গেছে। আগে যেখানে লাগত ৪০-৫০ দিন এখন সেখানে মাত্র ২০ দিনেই জাহাজ পৌঁছে যেতে পারে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে। বর্তমান বিশ্বের  সমুদ্র বাণিজ্যের ৫ ভাগ আসে এই সুয়েজ খাল থেকে।  ইজিপ্ট সুয়েজ খাল অথরিটির ২০০৩ এর রিপোর্ট অনুযায়ী সে বছর ১৭ হাজার ২২৪টি জাহাজ সুয়েজ খাল দিয়ে পার হয়েছে। অর্থাৎ পৃথিবীর শিপিং ট্রাফিকের শতকরা ভাগই হয়েছে খালটি দিয়ে।
অন্য এক জরিপে দেখা গেছে ২০১২ সালে সুয়েজ খাল দিয়ে ১৭,২২৫টি জাহাজ যাতায়াত করেছে অর্থাৎ দিনে গড়ে ৪৭টি।বর্তমানে এ খালের সাথে আরও প্রায় ৩৫ কিলোমিটার বাইপাস খনন করা হয়েছে যার ফলে সুয়েজ খালে প্রবেশের সময় জাহাজগুলোর অপেক্ষার সময় ১৮ ঘণ্টা থেকে ১১ ঘণ্টায় নেমে এসেছে। ধারনা করা  হচ্ছে ২০২৩ সালের মধ্যে  দৈনিক ৯৭টি জাহাজ যেতে পারবে এই খাল দিয়ে যার ফলে মিশরের অর্থনীতে যোগ হবে ১৩২০ কোটি ডলার।

______________________________