বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
বজ্রের ধারনাঃ
প্রতিদিন
আমরা নানা ধরনের কাজ করি এবং সেইসব কাজের জন্য বহুরকম জিনিস ব্যবহার করতে হয়।
এরপর কাজের শেষে দেখা যায় কিছু কিছু জিনিস আমাদের আর কাজে লাগে না। সেগুলি তখন অব্যবহারযোগ্য
বা অপ্রয়োজনীয় বলে আমরা ফেলে দিই। যেমন— খাবারের প্যাকেট, ভাঙাচোরা খেলনা, শিশি বোতল ভাঙা, কেটে যাওয়া বা ও টিউব লাইট, ময়লা কাগজ ইত্যাদি। এগুলো
| আমরা বর্জন করি বা
ফেলে দিই। এগুলিই হল বর্জ্য পদার্থ। প্রকৃতপক্ষে দৈনন্দিন জীবনে বাতিল সব পদার্থই
বজ্র । অন্যভাবে বলতে পারো -যে-কোনো কঠিন,
তরল কিংবা গ্যাসীয় পদার্থ, যেগুলি আমাদের
কোনো কাজে লাগে না অর্থাৎ ফেলে দেওয়া প্রয়োজন
, সেগুলিই হল বর্জ্য পদার্থ। বাড়ির মতো কলকারখানা,
হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস, আদালতেও এই ধরনের অপ্রয়োজনীয় জিনিস বা বর্জ্য পদার্থ বেরোয় এবং তার পরিমাণ অনেক বেশি। আর এগুলিই নোংরা বা
আবর্জনা হয়ে বাড়ির আশেপাশে বা রাস্তার ধারে পড়ে থেকে পরিবেশকে দূষিত করে।
বজ্রের প্রকারভেদ :
সাধারণভাবে
বর্জ্য পদার্থসমূহকে তিনটি বিভাগে ভাগ করা যায়—কঠিন,
তরল এবং গ্যাসীয়।
1. কঠিন বর্জ্য পদার্থঃ বর্জ্য
পদার্থের মধ্যে কাচ, প্লাস্টিক, টিন,
ব্যাটারি, কাগজ, নানারকম
ধাতব জিনিস, ছাই, কাপড় বা ন্যাকড়া,
টায়ার, টিউব প্রভৃতি কঠিন বর্জ্য পদার্থ
2. তরল বর্জ্য পদার্থঃ এগুলি
গৃহস্থালি, কলকারখানা, হাসপাতাল প্রভৃতি থেকে
নির্গত হয়, যেমন-মল-মূত্র থেকে সৃষ্ট বর্জ পদার্থ, বাড়িঘর-কলকারখানা-নিঃসৃত নোংরা জল, সাবান ও
ডিটারজেন্ট মিশ্রিত জল ইত্যাদি।
3. গ্যাসীয় বর্জ্য পদার্থ: কলকারখানা
ও গাড়ি থেকে নির্গত বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত গ্যাস, যেমন—সালফার ডাইঅক্সাইড,নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড প্রভৃতি।
|
বিষক্রিয়ার ভিত্তিতে বর্জ্য পদার্থসমূহকে দুটি
বিভাগে ভাগ করা যায় :
1. বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থঃ
এগুলি কঠিন, তরল, গ্যাসীয় ও
তেজস্ক্রিয় অর্থাৎ সবরকমই হতে পারে, যেমন—পারদ,ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম
প্রভৃতি ধাতু, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই, অব্যবহৃত কীটনাশক, ভাঙা কম্পিউটার সামগ্রী, ব্যাটারি, নাইট্রিক অক্সাইড প্রভৃতি বিষাক্ত বর্জ্য
পদার্থ। এগুলি মানুষ ও পশুপাখির জন্য ভীষণ ক্ষতিকর৷
2. বিষহীন বর্জ্য পদার্থ:
খাদ্যজাত বর্জ্য পদার্থ, কাচ, ধুলো
, কংক্রটি টুকরো , প্রভৃতি বিষহীন
বর্জ্য পদার্থ।
বর্জ্য
পদার্থের উৎসঃ
প্রধানত সাতটি উৎস থেকে
বর্জ্য পদার্থ সৃষ্টি হয়। এগুলি হল :
1. গৃহস্থালির বর্জ:
বাড়ির দৈনন্দিন কাজের মাধ্যমে যেসব বর্জ্য পদার্থ উৎপন্ন হয় সেগুলি এই শ্রেণির
অন্তর্ভুক্ত। যেমন—শাকসবজি ও ফলমূলের উচ্ছিষ্ট, মাছ-মাংসের ফেলে দেওয়া অংশে প্রভৃতি।
2. শিল্পবর্জ্য:
কলকারখানা থেকে নির্গত কঠিন, তরল, গ্যাসীয়, অর্ধতরল প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য
পদার্থকে শিল্পবর্জ বলা হয়। যেমন—চামড়া কারখানার
ক্রোমিয়াম যৌগ, আকরিক নিষ্কাশন প্রক্রিয়ায় নির্গত
নানাপ্রকার ধাতু, বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক পদার্থ প্রভৃতি।
3.
কৃষিজ
বর্জ্য: কৃষিজাত দ্রব্য থেকে নির্গত বর্জ্য পদার্থকে কৃষিজ বর্জ
নামে অভিহিত করা হয়। যেমন—আখের ছিবড়ে, খড়,
ধানের খোসা , নারকেলের ছোবড়া , প্রাণীজ বর্জ প্রভৃতি।
4.
পৌরসভার
বর্জ্য: শহরের বা পৌর এলাকার বাড়ি, অফিস,
বিদ্যালয়, বাজার, রেস্টুরেন্ট,
হোটেল প্রভৃতিতে সৃষ্ট
বর্জকে পৌরসভার বর্জ্য বলে। এর মধ্যে থাকে শাকসবজির অবশিষ্টাংশ, কাগজ, কাপড়, ডাবের খোলা ,
প্লাস্টিক, ধাতব টুকরো প্রভৃতি।
|
5.
জৈব
বর্জ্য: প্রধানত প্রাণী ও উদ্ভিদ থেকে যেসব বর্জ্য তৈরি হয়, সেগুলি জৈব বর্জ্য, যেমন-মাংস উৎপাদনকারী
কারখানাগুলি থেকে নির্গত প্রাণীজ বর্জ্য, মাছের উচ্ছিষ্ট,
ফুল-ফল-সবজি বাগানের বর্জ্য প্রভৃতি।
6.
চিকিৎসা-সংক্রান্তু
বর্জ্য: হাসপাতাল, নার্সিং হোম সহ বিভিন্ন প্রকার চিকিৎসা কেন্দ্রের আবর্জনা এই
শ্রেণির অন্তর্গত।
1)
অসংক্রামক
বর্জ্য পদার্থ: যেমন ওষুধের ফয়েল, প্লাস্টিক থালা প্রভৃতি।
2)
সংক্রমক
বর্জ্য পদার্থ: সিরিঞ্জ, চুঁচ, কাঁচি, ব্রেড, তুলো , গজ, রক্ত, ব্যান্ডেজ, অপারেশন সংক্রান্ত আবর্জনা প্রভৃতি।
7.
তেজস্ক্রিয় বর্জ্য:
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য, যেমন ছাই,
ভারী জল, চিকিৎসায় ব্যবহুত তেজস্ক্রিয়
বর্জ্য পদার্থ প্রভৃতি।
পরিবেশের ওপর বজ্রের প্রভাব :
জল, বায়ু,
মাটি প্রভৃতি পরিবেশের মৌলিক উপাদানগুলি বজ্রের মাধ্যমে ক্রমশই
দূষিত হতে থাকে। যেমন :
1) জলের ওপর প্রভাব: জলের
অপর নাম জীবন। পরিবেশের
অন্যতম প্রধান উপাদান তথা নিয়ন্ত্রক জল। অথচ সমুদ্র, হ্রদ, নদী, জলাভূমি এমনকি
পুকুরও এখন হয়ে উঠেছে বর্জ্য পদার্থ জমা হওয়ার স্থান। এর ফলে জল দূষিত হয়ে জলজ
প্রাণী ও উদ্ভিদের নানাভাবে ক্ষতি হচ্ছে, তাদের বংশবিস্তার
বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে ও সর্বোপরি জলজ বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হচ্ছে।
2)
বায়ুর
ওপর প্রভাব: বর্জ্য পদার্থ পচনের ফলে বায়ুদূষণ ঘটে। তা ছাড়া জমা
বর্জ্য পদার্থে আগুন লাগলেও বায়ু দূষিত হয়। এর ফলে জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি
হয়।
|
3)
মাটির
ওপর প্রভাব: গৃহস্থালি ও কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ, যেমন—ডিটারজেন্ট পাউডার, কীটনাশক,
প্লাস্টিক, পলিথিন, ধাতুণ্ড
প্রভৃতি মৃত্তিকার সঙ্গে মিশে তার স্বাভাবিক চরিত্র নষ্ট করে। তার ফলে মৃত্তিকার
উর্বরতা নষ্ট হয় এবং মৃত্তিকা বন্ধ্যা হয়ে যায়। মৃত্তিকা দূষণ উদ্ভিদ
খাদ্যশৃঙ্খলের মধ্যে দিয়ে উৎপাদক দেহে প্রবেশ করে নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি করে।
4)
জনস্বাস্থ্যের
ওপর প্রভাব: হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে সংক্রামক ও অসংক্রামক
বর্জ্য মিশে গেলে শুধু ওইসব প্রতিষ্ঠানেই নয়, আশেপাশের
এলাকাতেও বিভিন্ন প্রকার রোগ, যেমন—টিটেনাস,
হেপাটাইটিস, আন্ত্রিক, চর্মরোগ,
অ্যালার্জি,ফুসফুসের রোগ, টাইফয়েড প্রভৃতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
বজ্রের
ব্যবস্থাপনা (Waste Management)
বর্তমানে এটা প্রমানিত যে, বজ্র পদার্থ বিভিন্নভাবে পরিবেশকে খুবই দূষিত করে। তবে এটাও বাস্তব সত্য
যে, এইসব পদার্থকে জীবন থেকে বাদ দেওয়াও সম্ভব নয়। সুতরাং
সবসময় চেষ্টা করা দরকার যে, কীভাবে এইসব পদার্থকে পরিবেশের
বাস্তুতান্ত্রিক চক্রের একটি কার্যকরী উপাদান করে নেওয়া যায়। এজন্য বর্জ্য
পদার্থগুলিকে শুধুমাত্র অপসারণ বা স্থানান্তরণের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ না করে প্রয়োজন মতো এগুলির পরিমাণ হ্রাস, পুনর্ব্যবহার
এবং পুনর্নবীকরণের মাধ্যমে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বর্জ্য পদার্থ নিয়ন্ত্রণ
ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়। আর এটাই হল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (Waste Management)। প্রকৃতপক্ষে
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মূল ভিত্তি হল এই তিনটি R, যথা: Reduce
(পরিমাণ হ্রাস), Reuse (পুনর্ব্যবহার) ও Recycle
(পুনর্নবীকরণ)। অর্থাৎ এই তিনভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা যায়
1)
বর্জ্যের
পরিমাণ হ্রাস : গৃহস্থালি, কলকারখানা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান
প্রভৃতিতে যাতে বেশি বর্জ্য তৈরি না হয়, তাই জিনিসের ব্যবহার কমানো, জিনিস অপচয় না করা, জীবনযাত্রার মান পালটে চাহিদাকে
সীমিত রাখা, ব্যবহৃত জিনিস সরাসরি ফেলে না দিয়ে জমিয়ে রাখা
ইত্যাদির মাধ্যমে বর্জের পরিমাণ কমানো
যেতে পারে।
2)
পুনর্ব্যবহার
: কোনো পরিবর্তন না
করে বর্জ্য পদার্থ ব্যবহার করলে তাকে বলা হয় পুনর্ব্যবহার। যেমন—ফেলে দেওয়া জিনিস থেকে খেলনা, ঘর সাজানোর জিনিস,
লেখার সামগ্রী প্রভৃতি তৈরি করা হয়।
3)
পুনর্নবীকরণ : এই
পদ্ধতিতে বর্জ্য পদার্থকে পুনরায় প্রক্রিয়াকরণ বা পুনরাবর্তনের মাধ্যমে ব্যবহারযোগ্য
করে তোলা যায়। এর ফলে একই দ্রব্য বা নতুন দ্রব্য উৎপাদিত হয়। যেমন-লোহা বা অ্যালুমিনিয়াম সামগ্ৰীসমূহ ব্যবহারের ফলে
অকেজো হয়ে গেলেও পুনরায় গলিয়ে নতুন নতুন লোহা-ইস্পাত বা অ্যালুমিনিয়াম সামগ্রী
প্রস্তুত করে ব্যবহার করা যায়।
বর্জ্য পদার্থ তিন প্রকার—কঠিন,
তরল ও গ্যাসীয়। ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে এই ধরনের বর্জ্য অপসারণ ও
নিয়ণ করা হয়। যেমন:
কঠিন
বর্জ্যের ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি:
কঠিন
বর্জ্য পদার্থ ব্যবস্থাপনার প্রচলিত পদ্ধতিগুলি হল:
1)
বর্জ্য
পৃথকীকরণ: কঠিন বর্জ্য পদার্থ ব্যবস্থাপনার প্রথম পর্যায়টি হল
বর্জ্যের পৃথকীকরণ। প্রকৃতির সঙ্গে বর্জ্য পদার্থের প্রতিক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে
কঠিন বর্জ্য পদার্থসমূহকে দুই ভাগ করা হয়—জৈব
ভঙ্গুর (Biodegradeable) এবং জৈব অভঙ্গুর (Non-biodegradeable)।
1)
জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য পদার্থ:
উদ্ভিদ ও প্রাণীজাত সব বর্জ্য পদার্থই জৈব ভঙ্গুর বা জীব বিশ্লেষ্য। জৈব ভঙ্গুর
বর্জ্য পদার্থ হল সেই সব বর্জ্য পদার্থ যেগুলি যে-কোনো ধরনের অনুজীব বা আণুবীক্ষণিক বিয়োজক দ্বারা
বিশ্লিষ্ট হয়। জৈব পদার্থকে ভাঙা বা বিশ্লেষণের জন্য প্রকৃতিতে হাজার হাজার
প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, অমেরুদণ্ডী
প্রাণী প্রভৃতি আছে। এরা জটিল জৈব পদার্থসমূহকে ভেঙে সরল যৌগে রূপান্তরিত করে সেগুলিকে
পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করে তোলে এবং এইভাবে বর্জ্য পদার্থ থেকে আমাদের রক্ষা করে। মাটি ও জলভাগে
বর্তমান এইসব অনুজীব না-থাকলে বোধ হয় পৃথিবীতে
কোনো জীবই টিকে থাকতে পারত না। এরা আমাদের
বন্ধু।
2)
জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য
পদার্থ: মানুষের তৈরি বিভিন্ন ধরনের পলিমার, যেমন প্লাস্টিক, পলিথিন প্রভৃতি, ডি. ডি. টি-এর মতো বিভিন্ন ধরনের
রাসায়নিক পদার্থ, কাচ ইত্যাদি জৈব অভঙ্গুর অর্থাৎ এগুলিকে
জৈবিক পদ্ধতিতে ভাঙা যায় না! যুগ যুগ ধরে এরা অবিকৃত অবস্থায় পড়ে থাকে। অথচ
প্রতিনিয়তই আমরা পরিবেশে এইসব ক্ষতিকর বর্জ্য যুক্ত করে যাচ্ছি, যা আমাদেরই বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
2)
ভরাটকরণ: এই
পদ্ধতিতে একটি নির্দিষ্ট স্থানে এক স্তর কঠিন জৈব বর্জ্য এবং এক স্তর মাটি দিয়ে
ক্রমান্বয়ে অনেকগুলি পশুর তৈরি করা হয়। তবে সবার ওপরে থাকে একটি পুরু, মাটির শুর, যাতে ইদুর জাতীয় কোনো প্রাণী এতে সরসরি গর্ত করতে -পারে। মাটির নীচে
থাকা এই বর্জ্যগুলি জৈব ভঙ্গুর বলে এদের পচন হয় এবং তার ফলে এগুলির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈব ধর্মের পরিবর্তন ঘটে। এই প্রক্রিয়া চলার সময়
এ-থেকেমিথেন, অ্যামোনিয়া প্রভৃতি গ্যাস উৎপন্ন হয়। এগুলিকে
ল্যান্ডফিল (Landfill) গ্যাস। বলা হয়। এই প্রক্রিয়া শেষ
হবার পর যা অবশিষ্ট হিসাবে পড়ে থাকে সেগুলি দিয়ে নীচু জমি ভরাট করা হয়। পূর্ব কলকাতার
ধাপায় এই পতিতেই নীচু জমি ভরাট করে উর্বর কৃষিজমি তৈরি হয়েছে। এই পদ্ধতিটির
সুবিধা হল বর্জ্য পদার্থগুলি মাটি দিয়ে ঢাকা থাকে বলে বর্জজনিত দূষণে
জনস্বাস্থ্যের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে না। তবে অসুবিধা হল একই জায়গায় বর্জ্যগুলি জমে
থাকার ফলে তা থেকে নোংরা দুষিত জলে চুইয়ে চুইয়ে ভূগর্ভস্থ জলস্তরে মিশে পানীয়
জলের দূষণ হটাতে পারে।
3)
কম্পোস্টিং
(Composting) : সহজভাবে বলা যায় কম্পোস্টিং হল জৈব বর্জ্য থেকে জৈব সার উৎপাদনের একটি পদ্ধতি। এভাবে উৎপন্ন জৈব সারে
উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফেট প্রভৃতি পুষ্টিকর উপাদান যথেষ্ট পরিমাণে
থাকে। দুটি পদ্ধতিতে এই কম্পোস্টিং হয় :
1.
ব্যাঙ্গালোর পদ্ধতি:
প্রথমে মাটিতে পরিখা বা ট্রেঞ্চের মতো একটি অগভীর লম্বা গর্ত করা হয় এবং তার
মধ্যে নানা ধরনের জৈব বর্জ্য ফেলে তার ওপরে মানুষ, গবাদিপশুর
মলের স্তর তৈরি করা হয়। এরপর ওগুলি ব্যাকটেরিয়া, জৈব
বর্জ্য থেকে সৃষ্ট জৈব সার। কেঁচো প্রভৃতি দ্বারা বিয়োজিত হয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি
হয়।
2.
যান্ত্রিক পদ্ধতি:
প্রথমে জৈব বর্জ্যগুলিকে একটি যজ্রের সাহায্যে চূর্ণবিচূর্ণ করা হয়। এরপর তার
মধ্যে ব্যাকটেরিয়া মিশিয়ে একটি ঘূর্ণায়মান যন্ত্রে রাখা হয়। তার মধ্যে ওগুলির
পচন ঘটে কম্পোস্ট সার সৃষ্টি হয়।
তরল বর্জ্যের ব্যাবস্থাপনা:
1.
নিকাশি (Drairiage)
পদ্ধতি : শহরাঞ্চলে গৃহস্থালির
মল, মূত্র মিশ্রিত নোংরা জল পয়ঃপ্রণালীর মাধ্যমে শহরের বাইরে নিয়ে গিয়ে কোনো জলাভূমিতে জমা করা হয়। কালো রঙের | এই তরল বর্জ্যকে বিভিন্ন প্রকার ব্যাকটেরিয়া জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ার
মাধ্যমে বিয়োজিত করে। এরপর ওই তরল বর্জ্য
কয়েকটি পর্যায়ের মাধ্যমে পরিষ্কারহয়। জলাভূমিতে যেসব নীল-সবুজ শৈবাল (algae)
থাকে সেগুলি বর্জ্যের আমারপষ্টিকর উপাদান এবং সূর্যালোকের সাহায্যে সালোকসংশ্লেষ
ঘটায় এবং দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন উৎপাদন করে, এর ফলে জল পরিত হয়। জল যখন সম্পূর্ণ থিতিয়ে যায় তার মধ্যে থাকা কঠিন
বর্জ্য পদার্থগুলি নীচে পড়ে যায় এবং ওগুলি পরে জৈব সার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। আর
এইভাবে উৎপন্ন পরিশ্রুত জল মাছ চাষ, কৃষিকাজ, পশুপালন প্রভৃতির জন্য ব্যবহার করা হয়।
গ্যাসীয় বর্জ্যের ব্যাবস্থাপনা
1.
স্ক্রাবার (Scrubber) :স্ক্রাবার হল একপ্রকার যন্ত্র যার সাহায্যে কলকারখানা-নির্গত দূষিত বায়ু
পরিস্তুত। করা হয়। সাধারণত কলকারখানা থেকে যে বায়ু নির্গত হয়, তার মধ্যে নানা | ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ,
ভারী ধাতুকণা প্রভৃতি থাকে স্ক্রাবারের সাহায্যে ওগুলি সহজেই
পরিভ্রুত করা যায়। অন্যান্য বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণকারী যন্ত্রের সঙ্গে স্ক্রাবারের
পার্থক্য হল—এর কাজ বহুমুখী। এটি একইসঙ্গে বায়ুর মধ্যে থাকা
ক্ষতির কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় উপাদানসমূহকে নিয়ন্ত্রণ করে
এবং সেই সঙ্গে বায়ুকে শীতলও রাখে।
ভারতে শহর, না। মহানগরের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলায় পৌর-বর্জ্যের
পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যত্রতত্র এগুলি জমা করা হলে মূল্যবান জমির অপচয় ছাড়াও
মৃত্তিকা দূষণ, বায়ুদূষণ, জলদূষণের মাধ্যমে যে-কোনো সময় বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা থাকে। বেশি সংখ্যায়
রাসায়নিককারখানা স্থাপিত হওয়ায় বিপুল পরিমাণে রাসায়নিক পদার্থ উৎপাদিত হচ্ছে।
এইসব পদার্থগুলি জল, মাটি ও বায়তে মিশে উদ্ভিদজগৎ ও
প্রাণীজগতের ক্ষতিসাধন করে। কয়েকটি সমীক্ষা থেকে জানা গেছে। হাসপাতালের মোট
বর্জ্য পদার্থের মাত্র ১০ শতাংশ সংক্রামক বর্জ। সহজেই এই ১০ শতাংশ বর্জকে অপসারণ করা সম্ভব। কিন্তু যদি
সঠিক ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে এই সামান্য ৰজাই বিপথয়া সৃষ্টি করতে পারে। শুধু এটাই নয়, এর সঙ্গে
পৌরবর্জ্য মিশে গেলে বিপুল পরিমাণে বর্জ্য পদার্থ সংক্রামক হয়ে যাবে। তখন তাকে
নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন হয়ে যায়। এজন্যই বর্জ্য পদার্থসমূহকে নির্দিষ্ট
পদ্ধতিতে ও সঠিক সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করে জনস্বাস্থ্য তথা পরিবেশকে ভয়ংকর
বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা - প্রয়োজন।
বজ্র ব্যাবস্থাপনায় শিক্ষার্থীর
ভূমিকা:
সাধারণভাবে বলা যায়, শিক্ষার্থীরা পাঠ্যপুস্তকে যে তাত্ত্বিক শিক্ষা পায়,
একমাত্র ব্যবহারিক প্রয়োগ হলে তবেই সেই শিক্ষার উদ্দেশ্য সফল হয়।
সুতরাং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার তাত্ত্বিক শিক্ষাকে ব্যাবহারিক প্রয়োগের জন্য
শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করতে হবে। এজন্য | শিক্ষার্থীরা
যা যা করবে, সেগুলি হল বাড়িতে এবং বিদ্যালয়ে গায়
খাবার-দাবারের অবশিষ্টাংশ, মোড়কের কাগজ, প্লাস্টিক প্রভৃতি। নির্দিষ্ট স্থানে রাখা পাত্রে ফেলবে। যেখানে সেখানে থুথু, কফ বা মুখ থেকে কোনো
জিনিস ফেলবে না।জৈব-অভঙ্গুর বা অব্যবহারযোগ্য
কোনো জিনিসকে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যায় কিনা সেই চেষ্টা। করবে।
প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনো জিনিস ব্যবহার করবে না। এ বিষয়ে নিজে এবং
বন্ধুদের সচেতন করবে। টি স্থানীয় এলাকায় বিশেষ কোনো বর্জ্যের জন্য সমস্যা সৃষ্টি হলে তা নিরসনে
কর্মসূচি গ্রহণ এবং তাতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে হবে। বর্জ্য পদার্থের পুনর্ব্যবহার,
বর্জজনিত দূষণ, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ
ব্যবহারের অপকারিতা ইত্যাদি বিষয়ে নিজে সচেতন হবে এবং সকলকে সচেতন করবে।
Thanks 💓💖
ReplyDelete